রোহিঙ্গা সমস্যার মূলে আছে মায়ানমারের নাগরিকত্ব আইন ১৯৮২
রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা মায়ানমার থেকে উদ্ভুত বাংলাদেশ, ভারত ও থাইল্যান্ডে প্রকট আকারে বিস্তৃত আর কমবেশি সারা বিশ্বে বিরাজমান। বিশেষ করে বাংলাদেশে বর্তমানে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাড়িয়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা ১১ লক্ষের ওপরে। এরা ফিরে যাওয়ার তো কোন চিন্তাই করছে না বরং এদেশে মহাসমাবেশ করছে।
কিন্তু রোহিঙ্গা কারা? কীভাবে সৃষ্টি হলো রোহিঙ্গা সংকট? বিষয়গুলোর গভীরে প্রবেশ এই পোস্টের গোল টার্গেট...
মায়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় আরাকান স্টেটের (পরবর্তীতে নাম পরিবর্তন করে রাখাইন নামকরণ করা হয়) মুসলিম ও হিন্দু বাসিন্দাদের বা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব হঠাৎ ১৯৮২ সালে অস্বীকার করে বসলো দেশটি।
রোহিঙ্গারা হচ্ছে ওই রাজ্যের বাসিন্দা, যাদের সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে ওই এলাকার আদিবাসী হিসেবে, যাদের মধ্যে ওই এলাকার নির্বাচিত এমপিরাও রয়েছেন। ইতিহাস বলে, সেই অষ্টম শতাব্দীতে আরবদের আগমনের মধ্য দিয়ে আরাকানে মুসলিমদের বসতি শুরু হয়। ফলে মুসলিম বসতিস্থল হিসেবে সুুুুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে আরাাকান বা রাখাইন স্টেটের।
মায়ানমারের সিটিজেনশিপ এক্ট, ১৯৮২ তে তৎকালীন মায়ানমারের সামরিক সরকার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করে আইন করে বসলো। তখন মায়ানমার বিশ্বের নিষিদ্ধ দেশ। জাতিসংঘ অবরোধ জারি করে রেখেছিল দেশটিকে। যার ফলস্বরূপ বিশ্বের সব দেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন ছিল।
দেশটি থেকে সামরিক সরকার উৎখাত হয়েছে। গণতন্ত্রকামী নেত্রী হিসেবে পরিচিত শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সুচি দেশটির সরকার প্রধান হলেও দেশটির পার্লামেন্টের ২৫% সদস্য পদ সেনা সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত। সেই সেনাবাহিনী এখন সুচির কাঁধে বন্দুক রেখে তাদের শিকার করছে।
২৫ আগস্ট ২০১৭ মায়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে শুরু করে “ক্লিয়ারেন্স অপারেশন”। এতে কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যাসহ ধর্ষণ, বাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ নির্যাতনের মহোৎসব শুরু করে। গণহত্যা থেকে বাঁচতে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা পাড়ি জমায় কক্সবাজারে।
এদের প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ সরকারের কোন উদ্যোগই কাজে আসছে না।
এদিকে রোহিঙ্গা সমস্যা ডালপালা ছড়িয়ে বিস্তৃত হচ্ছে। নিয়ন্ত্রণসহ নানা উদ্যোগের কথা বলা হলেও বাস্তবে হচ্ছে না তেমন কিছুই। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কোন শুমারি বা গণনা বা তালিকা তৈরির কোনো চেষ্টাই শুরু হয়নি।
শরনার্থীদের কতগুলো শিশু দেশে আসার পর জন্মালো সে হিসেবও স্পষ্ট নয়। রোহিঙ্গারা ইতিমধ্যেই বাংলাদেশি জন্মসনদের জন্য চেষ্টা করছে, যেসব চেষ্টার খুব সামান্যই ধরা পড়া স্বাভাবিক। সরকার বা প্রশাসনের নজরে এলে রোহিঙ্গা ছাত্রছাত্রীর পড়াশোনা বন্ধও করা হচ্ছে। অন্যদিকে অর্থের বিনিময়ে চলছে বাংলাদেশী জাতীয় পরিচয়পত্র, এমনকি বাংলাদেশি পাসপোর্ট সংগ্রহের চেষ্টা। সফল হওয়ার খবরও আছে আবার হঠাৎ ধরা খাওয়ার রেকর্ডও আছে।
দেশে বৈধ কাগজপত্র নিয়ে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে গেলেই দালাল ছাড়া সম্ভব হয় , বরং শিকার হতে হয় সীমাহীন ভোগান্তির। কিন্তু অবৈধ পথে জাল নাগরিকত্ব সনদ দিয়ে রোহিঙ্গারাও পেয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশী পাসপোর্ট।
কেন রোহিঙ্গাদের হিসাব কষে শেষ করা যায়নি?
এই লাখো রোহিঙ্গাদের মধ্যে কাজ করে খেতে পারে এমন লোক পাওয়া অসম্ভব কোন ব্যাপার নয়। তাদের অনেকের মধ্যেই থাকতে পারে কাজ করে খাওয়ার ইচ্ছা এমনকি নৈপূণ্যও। ব্যাপক গবেষণা ও জরিপ হওয়া উচিত রোহিঙ্গাদের নিয়ে এবং কার্যকরভাবে শরণার্থী ক্যাম্পে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে গ্রহণ করা উচিৎ কর্মমুখী প্রকল্প।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মায়ানমার সেনাবাহিনীর শুরু করা নির্মম গণহত্যার হাত থেকে বাঁচতে এভাবেই দলে দলে রোহিঙ্গারা এসে আশ্রয় নিতে থাকে কক্সবাজারে |
![]() |
নারী, শিশুসহ রোহিঙ্গারা সাথে তল্পিতল্পাসহ গবাদিপশু |
এ যে মানুষের ঢল
|
বর্তমানে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা ১১ লক্ষের ওপরে। এরা ফিরে যাওয়ার তো কোন চিন্তাই করছে না বরং এদেশে মহাসমাবেশ করছে।
কিন্তু রোহিঙ্গা কারা? কীভাবে সৃষ্টি হলো রোহিঙ্গা সংকট? বিষয়গুলোর গভীরে প্রবেশ এই পোস্টের গোল টার্গেট...
মায়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় আরাকান স্টেটের (পরবর্তীতে নাম পরিবর্তন করে রাখাইন নামকরণ করা হয়) মুসলিম ও হিন্দু বাসিন্দাদের বা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব হঠাৎ ১৯৮২ সালে অস্বীকার করে বসলো দেশটি।
রাখাইন স্টেট আর কক্সবাজারের পার্শ্ববর্তী অবস্থান স্পষ্ট এই মানচিত্রে |
রোহিঙ্গারা হচ্ছে ওই রাজ্যের বাসিন্দা, যাদের সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে ওই এলাকার আদিবাসী হিসেবে, যাদের মধ্যে ওই এলাকার নির্বাচিত এমপিরাও রয়েছেন। ইতিহাস বলে, সেই অষ্টম শতাব্দীতে আরবদের আগমনের মধ্য দিয়ে আরাকানে মুসলিমদের বসতি শুরু হয়। ফলে মুসলিম বসতিস্থল হিসেবে সুুুুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে আরাাকান বা রাখাইন স্টেটের।
মায়ানমারের সিটিজেনশিপ এক্ট, ১৯৮২ তে তৎকালীন মায়ানমারের সামরিক সরকার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করে আইন করে বসলো। তখন মায়ানমার বিশ্বের নিষিদ্ধ দেশ। জাতিসংঘ অবরোধ জারি করে রেখেছিল দেশটিকে। যার ফলস্বরূপ বিশ্বের সব দেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন ছিল।
দেশটি থেকে সামরিক সরকার উৎখাত হয়েছে। গণতন্ত্রকামী নেত্রী হিসেবে পরিচিত শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সুচি দেশটির সরকার প্রধান হলেও দেশটির পার্লামেন্টের ২৫% সদস্য পদ সেনা সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত। সেই সেনাবাহিনী এখন সুচির কাঁধে বন্দুক রেখে তাদের শিকার করছে।
![]() |
রাখাইনে মানবতাবিরোধী অপরাধ |
![]() |
নির্যাতনের পর এভাবেই ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয় মায়ানমার আর্মি |
২৫ আগস্ট ২০১৭ মায়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে শুরু করে “ক্লিয়ারেন্স অপারেশন”। এতে কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যাসহ ধর্ষণ, বাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ নির্যাতনের মহোৎসব শুরু করে। গণহত্যা থেকে বাঁচতে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা পাড়ি জমায় কক্সবাজারে।
![]() |
রোহিঙ্গা নির্যাতন |
এদের প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ সরকারের কোন উদ্যোগই কাজে আসছে না।
এদিকে রোহিঙ্গা সমস্যা ডালপালা ছড়িয়ে বিস্তৃত হচ্ছে। নিয়ন্ত্রণসহ নানা উদ্যোগের কথা বলা হলেও বাস্তবে হচ্ছে না তেমন কিছুই। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কোন শুমারি বা গণনা বা তালিকা তৈরির কোনো চেষ্টাই শুরু হয়নি।
শরনার্থীদের কতগুলো শিশু দেশে আসার পর জন্মালো সে হিসেবও স্পষ্ট নয়। রোহিঙ্গারা ইতিমধ্যেই বাংলাদেশি জন্মসনদের জন্য চেষ্টা করছে, যেসব চেষ্টার খুব সামান্যই ধরা পড়া স্বাভাবিক। সরকার বা প্রশাসনের নজরে এলে রোহিঙ্গা ছাত্রছাত্রীর পড়াশোনা বন্ধও করা হচ্ছে। অন্যদিকে অর্থের বিনিময়ে চলছে বাংলাদেশী জাতীয় পরিচয়পত্র, এমনকি বাংলাদেশি পাসপোর্ট সংগ্রহের চেষ্টা। সফল হওয়ার খবরও আছে আবার হঠাৎ ধরা খাওয়ার রেকর্ডও আছে।
দেশে বৈধ কাগজপত্র নিয়ে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে গেলেই দালাল ছাড়া সম্ভব হয় , বরং শিকার হতে হয় সীমাহীন ভোগান্তির। কিন্তু অবৈধ পথে জাল নাগরিকত্ব সনদ দিয়ে রোহিঙ্গারাও পেয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশী পাসপোর্ট।
কেন রোহিঙ্গাদের হিসাব কষে শেষ করা যায়নি?
এই লাখো রোহিঙ্গাদের মধ্যে কাজ করে খেতে পারে এমন লোক পাওয়া অসম্ভব কোন ব্যাপার নয়। তাদের অনেকের মধ্যেই থাকতে পারে কাজ করে খাওয়ার ইচ্ছা এমনকি নৈপূণ্যও। ব্যাপক গবেষণা ও জরিপ হওয়া উচিত রোহিঙ্গাদের নিয়ে এবং কার্যকরভাবে শরণার্থী ক্যাম্পে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে গ্রহণ করা উচিৎ কর্মমুখী প্রকল্প।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আমার কথা ভালো লাগবে এমন নাও হতে পারে
ভালো না লাগলে কী ও কেন ভালো লাগেনি
উল্লেখ করে কমেন্ট করুন
আর ভালো লাগলে তো জানাতেই পারেন