ক্যাপ্টেন মাজেদের ফাঁসি হলো, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় একটা অগ্রগতি

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচারপ্রক্রিয়া চলাকালীন শুরু করা এই ব্লগপোস্টটিতে একটা আপডেট এলো। করোনা আতঙ্ক চলাকালে ক্যাপ্টেন মাজেদ বিদেশ থেকে চলে এলো দেশে। ধরা পড়লো। আজ ৯ এপ্রিল তার আবেদন প্রেসিডেন্টের ক্ষমার ফর্মালিটিতে। কিন্তু কোথা থেকে ফিরলো ঘাতক মাজেদ। অনলাইন অফলাইন তথ্যের ভিত্তিতে লেখা এই পোস্টেদেখলাম পরে অন্য মিডিয়ায় দেখলাম, জানলাম ক্যাপ্টেন মাজেদ কিভাবে সেনেগাল থেকে এলো বুঝা গেল না, কেননা, মিডিয়ায় যদ্দূর জানা গেল, মাজেদ দেশে ঢুকেছে ভারত হয়ে।                       


ক্যাপ্টেন মাজেদের ফাঁসি কার্যকর হয় ৫মে,২০২০। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যার পর অন্য সব খুনির সঙ্গে আবদুল মাজেদ প্রথমে লিবিয়ায় চলে যান। এরপর তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান তাঁকে সেনেগাল দূতাবাসে চাকরি দেন। ১৯৮০ সালে দেশে ফিরে আসার পর তিনি বিআইডব্লিউটিসিতে যোগ দেন। সে সময় উপসচিব পদমর্যাদায় তিনি চাকরি করেন। পরে তিনি যুব উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ে পরিচালক পদে যোগ দেন।
ইতিপূর্বেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারসহ ১৫ আগস্ট হত্যাযজ্ঞের বিচার সম্পন্ন  হয়েছে ব্যাপক চড়াই-উৎরাই পাড়ি দিয়ে।  
২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১২ আসামির মধ্যে ৫ জনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। এই কুলাঙ্গাররা হলো- 
    ১. লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান,
     ২. লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, 
     ৩. মেজর বজলুল হুদা, 
     ৪. লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহম্মেদ (আর্টিলারি) ও 
     ৫. লে. কর্নেল একেএম মহিউদ্দিন আহম্মেদ (ল্যান্সার)


এখনো বাকি আছে ৭ জন যাদের একজন আজিজ পাশা ২০০১ সালে জিম্বাবুয়েতে মারা গেছে বলে জানা যায়।

বাকি ৬ জন এখনো পলাতক -
১. লে. কর্নেল (অব.) খন্দকার আবদুর রশীদ 
এই খুনি লিবিয়ার বেনগাজীতে আছে বহাল তবিয়তে। পাকিস্তানে মাাঝে মাঝে আসে। 

২. মেজর (বরখাস্ত) শরিফুল হক ডালিম
মেজর ডালিম নামে পরিচিত এই আত্মস্বীকৃত ও ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত এই খুনি থাকে আরেক আফ্রিকান দেশ কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে। এরও পাকিস্তানে যাতায়াত আছে।    
  
৩. মেজর (অব.) এ এম রাশেদ চৌধুরী
ইতিমধ্যে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত এক খুনিকে যুক্তরাষ্ট্র নিজ উদ্যোগে দেশে ফেরৎ পাঠালেও খুনি রাশেদ চৌধুরী কিন্তু এখনো যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলসেই থাকে, যাকে এখনো ফেরৎ এনে ফাঁসি কাষ্ঠে ঝুলানো সম্ভব হয়নি।  

৪. লে. কর্নেল (অব.) এফ এইচ এম বি নুর চৌধুরী

যে দু'জন বঙ্গবন্ধুর ওপর গুলি চালিয়েছিলো তাদের একজন এই নূর চৌধুরী। এই খুনি জার্মানিতে পালিয়ে ছিলোো এবং পরবর্তীতে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে এখন পর্যন্ত কানাডায় আছে। 
            
৫. ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল মাজেদ 
খুনি মাজেদ আছে সেনেগালে। 
  
৬. রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন খান
খুনি মোসলেহ উদ্দিন আজও জার্মানিতে রয়েছে। 

কিন্তু ৯ বছর কেটে যাচ্ছে, পলাতক এই খুনিরা জীবিত থাকতেই তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকরের ব্যবস্থা করাই এখন ১৯৭১ সালে স্বাধীন হওয়া এই জাতির প্রত্যাশা। সময় পার হয়ে যাচ্ছে, কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করে বাকিদেরও ফাঁসি কার্যকর করা গেলে জাতি  কলঙ্কমুক্ত হতে পারে। ফলে, এখন এটি সময়ের দাবি......      

 ১৫ আগস্টের শহীদরা, আমরা তোমাদের ভুলবোনা....


  
ঘাতকরা আগস্ট ট্রাজেডিতে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, হত্যা করেছে বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবসহ তাদের সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশুপুত্র শেখ রাসেলসহ পুত্রবধু সুলতানা কামাল ও রোজি জামালকে।

গুলিবিদ্ধ বঙ্গবন্ধু 

বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই শেখ নাসেরও হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।  এছাড়া ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাতের পরিবারের আরিফ, বেবি ও সুকান্তবাবুকেও হত্যা করা হয়। হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃস্বত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনিকে। এর বাইরে আবদুল নাঈম খান রিন্টু ও কর্নেল জামিলসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের ১৬ ঘনিষ্ঠজনকেও প্রাণ দিতে হয় সেই রাতে। 
পচাত্তরের ১৫ আগস্টের সকল শহীদদের স্মৃতির প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।     





স্মৃতির পাতায় বঙ্গবন্ধু-

১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়া গ্রামে জেলা দায়রা জজ আদালতের সেরেস্তাদার শেখ লুৎফর রহমান ও তার স্ত্রী সায়েরা খাতুনের মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম হয় বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের জনক স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। 




তাদের ছয় সন্তানের মধ্যে তৃতীয় শেখ মুজিবই ১৯৬৬ সালের তদানিন্তন পশ্চিম পাকিস্তানের স্বায়ত্ত্বশাসনের দাবি সংবলিত ছয় দফার প্রবক্তা। আর এই ছয় দফার ভিত্তিতে গড়ে তোলা আন্দোলনেই শেষ নাগাদ স্বাধীনতার সংগ্রাম এবং অবশেষে স্বাধীনতা। 


১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ তার দেয়া ভাষণেই দেশের আপামর জনসাধারণ ঝাপিয়ে পড়ে মুক্তির সংগ্রামে। 


















 Liberation supplement



স্বাধীনতার পরে ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করলেন শেখ মুজিবর রহমান। দেশের জনগণ তার হাতেই তুলে দেয় দেশের শাসনভার।



কিন্তু কয়েক বছর না যেতেই ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট শেখ মুজিব, তাঁর পরিবার এবং তাঁর ব্যক্তিগত সহকারীদের হত্যা করে সেনাবাহিনীর একদল তরুণ, উচ্চাভিলাসী ও পথভ্রষ্ট কর্মকর্তা। সশস্ত্র ঘাতকরা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডের বাড়িটিকে মৃত্যুপুরীতে পরিণত করে।   


শিশুপুত্র রাসেলের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু


শেখ কামাল

শেখ জামাল


১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক প্রণয়ন করেন ইনডেমনিটি এক্ট। কিন্তু সংসদ কার্যকর না থাকায় তা পাস করিয়ে নিতে পারেননি। পরবর্তীতে ১৯৭৮ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান অর্ডিন্যান্স বা অধ্যাদেশ আকারে আইনটি সংসদে পাস করিয়ে এই হত্যাকান্ডের বিচারের পথ বন্ধ করে দেন।

১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে সেবছরই ১২ নভেম্বর কুখ্যাত এ অধ্যাদেশটি বাতিল করে খুনিদের বিচারের পথ খুলে দেন, কিন্তু ওই সরকারের মেয়াদে এ হত্যাকান্ডের বিচারকাজ শুরু হওয়ার পরও শেষ হয়নি। সে বছরই ২ অক্টোবর মুহিতুর রহমান বাদী হয়ে ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলাটি দায়ের করেন।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা



 শেখ রেহানা


জাতির পিতার দুই মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে থাকায় তারা বেঁচে যান।







মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাংলাদেশের মানুষের জীবন ও জীবিকা

বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন ব্যাংক, যেগুলো আজো টিকে আছে স্বমহিমায়